প্রকাশিত: Tue, Apr 23, 2024 11:54 AM
আপডেট: Sat, Dec 6, 2025 11:38 PM

একটি আত্মহনন, যা ভবিষ্যৎ বলে দেয়

কাকন রেজা : কী ভয়াবহ অবস্থা। আমার পাশের জেলা জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা। সেখানের হাসান আলী নামে এক যুবক ঈদের দিন স্ত্রী সন্তানের মুখে গোশত তুলে দিতে পারেনি। স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে মলিন মুখে নিজ বাপের বাড়ি গেছে। স্ত্রী সন্তানের মলিন মুখ সইতে পারেনি হাসান। চিরকুট লিখে নিজের অপারগতার জন্য ক্ষমা চেয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে সে। গণমাধ্যম আত্মহত্যার খবরটি করেছে। কিন্তু এই যে মানুষের অপারগতার যাতনা তার খবর করতে ব্যর্থ হয়েছে দেশের সকল গণমাধ্যম। কেন ব্যর্থ এ কথা জানে সবাই, কিন্তু বলতে মানা। 

আপনারা বুঝতে পারছেন, হাসান আলী নিজের জীবন দিয়ে আমাদের ভবিষ্যতের জানান দিয়ে গেল। আমাদের অর্থনৈতিক বৈষম্যের কথা বলে গেল। বলে গেল, একদিকে গুটিকতক ফটকাবাজ ধনিক শ্রেণির সৃষ্টি হচ্ছে, বিপরীতে বিশাল জনগোষ্ঠী ক্রমেই দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হচ্ছে। বুঝতে পারছেন ভয়ানক সেই বৈষম্যের কথা আপনারা? বুঝতে পারছেন, হাসান আলীর মতন কেউ কেউ এই বৈষম্যের ফলে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। অন্যরা ভয়ানক ক্ষোভ পুষে রেখেছে বুকের খাঁচায়। খাঁচার দরোজা খুলে গেলে কী হবে তা কি আঁচ করতে পারছেন, যাদের পারা উচিত। ঈদের আনন্দ কি এ খবর পড়ার পর থাকে, না এমনিতেই আছে? 

প্রতিবারের মতন এবারও ঈদ করেছি নিজ জেলায়। ঈদের আগের দিন এমন অসংখ্য মলিন মুখ চোখে পড়েছে। যাদের হাত পাতার কথা নয় বরং দেওয়ার কথা, তারাও লজ্জিত মুখে ধার চেয়েছে অন্যের কাছে। নতুন পোশাক পেয়ে বাচ্চার আনন্দিত মুখ বাবার মলিন মুখের দিকে চেয়ে ম্রিয়মাণ হতে দেখেছি। বিপরীতে দেখেছি একপাল ফটকাবাজের প্রদর্শনবাদী মুখ। দেখাতে চেয়েছে দেখ আমি কত বড় ‘দ’। এবার অনেকেরই ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হয়েছে। 

না, তার অর্থ এই নয় সড়ক দুর্ঘটনা কম ছিলো, কিন্তু নির্বিঘ্নতা ছিলো যানবাহনের টিকিট প্রাপ্তিতে। প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে কি এবার গাড়ি বৃদ্ধি পেয়েছে? এর উত্তর রয়েছে সত্তর শতাংশ পোশাকর্মীর বেতন বকেয়া থাকার খবরে। বেতন না পেয়ে তারা বাড়ি গিয়ে কী করবে? তাদের অপেক্ষায় মানুষের হাতে কী তুলে দেবে? এতটা না হলেও বাকি সেক্টরের চিত্রও এরচেয়ে ভালো নয়। ঈদের আগে যাদের মিনি ট্রাক ভাড়া বাড়িতে আসতে দেখা গেছে, তারা এবার আসেনি। সুতরাং টিকিট প্রাপ্তির নির্বিঘ্নতা স্বাভাবিক। এনিয়ে আত্মতৃপ্তির কিছু নেই বরং রয়ে গেছে অদেখা ভবিষ্যতের আশঙ্কা। একই আশঙ্কা হাসান আলীর আত্মহননেও। লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট